বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২২

চুপিচুপি জনি বিয়ে করল নাদিয়াকে, গল্পঃ অর্ধাঙ্গিনী

আমি একটি অন্ধ নারীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছি। এই খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাবা এসে ঠাসস করে একটি চর লাগিয়ে দিলো আমার গালে! এই ঘটনা দেখে, আমি সেখানেই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। কেননা, আজ পযর্ন্ত কোনোদিন ভুলেও বাবা আমার গায়ে হাত তোলেনি। আমি চুপ করে আছি দেখে - বাবা আরো রাগান্বিত হয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলোঃ

__ ছি "জনি" তুই এতোটা নিচে নেমে গেছিস? তোকে ছোটবেলা থেকে আমি কি না দিয়েছি? যখন তুই যা চেয়েছিস, বিনা প্রশ্নে সেটাই তোকে এনে দিয়েছি। আর আজকে কিনা তুই - আমাদের না জানিয়ে একটি অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছিস? এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারলি তুই? ( বাবা ) 

বাবাকে থামিয়ে দিয়ে মা শান্ত গলায় আমাকে বলতে লাগলো!

__ বাবা তুই এটা না করলেও পারতিস। আমাদের বললে কি আমরা এই বিষয়টা দেখতাম নাহ? তুই আমাদের না জানিয়ে এই কাজটা কেনো করলি " জনি"? ( মা ) 

__ মা, আমার পুরো কথাটা তো তোমরা আগে শুনবে। ( আমি ) 

__ তোর কোনো কথা আমরা শুনতে চাইনা। আজ থেকে আমাদের আর কোনো ছেলে নেই। তুই এখনই বের হয়ে যা - এই বাসা থেকে। (বাবা ) 

__ বাবা প্লিজ শুধুমাত্র দু'টো মিনিট আমাকে কথা বলার সুযোগ দাও! ( আমি ) 

__ তোর কথা শুনতেও এখন আমাদের ঘৃণা হচ্ছে। তুই এখনই ওই অন্ধ মেয়েকে নিয়ে, এই বাসা থেকে বের হয়ে যা "জনি"। ( বাবা ) 

__ অনেক হয়েছে - এবার চুপ করো সবাই। তোমরা বারংবার অন্ধ বলে ও কে ছোট করছো কেনো? অন্ধরা কি মানুষ নাহ? নাকি তাদের আল্লাহ সৃষ্টি করেনি? তাহলে শুনো - তোমরা যাকে বারবার অন্ধ বলে খোটা দিচ্ছো। আজকে ওর জন্যেই  তোমাদের ছেলে বেঁচে আছে! ( আমি ) 

__ মানে কি বলতে চাস তুই " জনি"? ( মা ) 

__ মানে এটাই যে - দুই মাস আগে বড় একটি দূর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচিয়েছে আমাকে এই মেয়েটি। কিন্তু আমাকে বাঁচাতে গিয়ে - সে তার নিজের দু'টো চোখই হারিয়েছে। এই মেয়েটি যদি সেদিন, আমাকে সেই গাড়ী দূর্ঘটনার হাত থেকে না বাঁচাতো - তাহলে হয়তো আজকে আমি আর তোমাদের মাঝে থাকতাম নাহ। এই নাদিয়া নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে বাঁচাতে গিয়ে - নিজের দেখার শক্তিই হারিয়ে ফেলেছে। ( আমি ) 

__ কি বলছিস জনি? ( বাবা ) 

__ আর সত্যি একটা কথা জানো কি তোমরা! এই মেয়েটির এই পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ নেই। ছোট থেকেই সে এতিমখানা তে থেকে পড়াশোনা করেছে। যে মেয়েটি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে - আমাকে বাঁচাতে পারে। জীবনসঙ্গী হিসেবে আমি সেই মেয়ে নাদিয়াকেই সারাজীবন চাই। তাই তোমাদের কিছু না জানিয়েই আমি ও কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি। নাদিয়া এখন অন্ধ হতে পারে। কিন্তু আমার বিশ্বাস - নাদিয়ার কাছে সারাজীবন আমার জন্যে ভালোবাসার কোনো কমতি হবেনা। এখন তোমরা চাইলে - আমি ও কে নিয়ে এই বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। 

এটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই দেখতে পেলাম - বাবা এবং মা এসে আমাদের জড়িয়ে ধরলো। তারা কাঁদতে কাঁদতে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলো। এবং বাবা মা দুজনেই তাকে বলতে লাগলো - আমাদের বুঝতে ভুল হয়ে গিয়েছে মা। আমাদের তোরা ক্ষমা করে দে! তোকে আমাদের নিজের মেয়ের মতোন করে রাখবো। কোনোদিন একটি আচ ও তোর শরীরে আসতে দিবো না!

বাবা - মায়ের কথা শুনে আমার নিজের চোখ দিয়েও অশ্রু ঝরতে লাগলো। আমি চাইনা আমার জন্যে একটি মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যাক। হয়তো নাদিয়ার দেখার শক্তি আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো নাহ - তবে সারাজীবন তাকে এতোটা আগলে রাখবো। যাতে করে নাদিয়া তার চোখের থেকেও, আমার ধরা হাতকে বেশী বিশ্বাস করে - সারাজীবন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারে ( সমাপ্ত ) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন