মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার ছোট একটা ঘটনা

 স্বামী বাসায় এসেছেন। তিনি সাথে করে নিয়ে এসেছেন তার তিনজন শৈশবের বন্ধু। যাদের সঙ্গে উনার দীর্ঘদিন পর দেখা। তারপর ঘরে এসেই স্বামী বন্ধুদের বসিয়ে গেলেন রান্না ঘরে। স্ত্রী ততক্ষণে রেঁধে উনার বাকী কাজগুলি করছিলেন। স্বামী এসেই স্ত্রীর কানে কানে প্রশ্ন করলেন, "এই তুমার রান্না কি শেষ?"

স্ত্রী তখন পেছনে ফিরে বললেন, "হুম মাত্রই রান্না শেষ করলাম। এখন বাসন মাজার কাজটা করতেছি।"

স্বামী তখন অস্থির হয়ে বললেন, "আচ্ছা যাই রেঁধেছো একটু তাড়াতাড়ি বেড়ে ফেল। আমার তিনজন শৈশবের বন্ধুকে সাথে নিয়ে এসেছি। 

আসলে অনেকদিন পর তাদের সাথে দেখা তো তাই আর কি না এনে পারলাম না।"

স্ত্রী তখন মুচকি হেসে বললেন, "হুম সেটাই তো স্বাভাবিক। তোমার শৈশবের বন্ধুদের সাথে তোমার এতদিন পরে দেখা হয়েছে আর তুমি তাদের ঘরে নিয়ে আসবে না এমন কি হয়! আচ্ছা তুমি গিয়ে তাদের সঙ্গে গল্প করতে থাকো আর আমি খাবার নিয়ে আসছি।"

আজ স্ত্রী তাঁর স্বামীর পছন্দের খাবার, শুটকির তরকারি, টমেটোর ভর্তা আর ডাল রান্না করেছেন। কিন্তু আজ খাবারের পরিমাণ এতোটা নয় যে পাঁচ জনের হয়ে যাবে। তাছাড়া মাসের শেষ তো তাই ঘরে অন্যান্য কিছু নেই যে যে স্ত্রী রান্না করবেন। তারপর স্ত্রী তাড়াতাড়ি বাসন মাজার কাজটা সেরে খাবার বেড়ে নিলেন। স্বামী অন্য রুমে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছেন আর স্ত্রী এই দুশ্চিন্তায় ভুগছেন যে খাবারে কি কুলাবে! স্ত্রী খাবার বেড়ে বন্ধুরা যে রুমে আছেন সেখানে চলে গেলেন। খাবার টা খাবার টেবিলে সাজিয়ে বন্ধুদের কে পালাক্রমে সালাম জানালেন। স্বামীকেও স্ত্রী বন্ধুদের সঙ্গে খাবার দিলেন। স্বামী বন্ধুদের সাথে বসে তালে তাল মিলিয়ে খাচ্ছেন আর শৈশবের স্মৃতিগুলি আদান প্রদান করছেন। অন্যদিকে ভাতের পাত্রে ভাত আর সামান্যই আছে। যেটুকু ভাত আছে তাতে একজনের পেটের এক কোণাও ভরবে না। তখন স্ত্রী ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লেন এই ভেবে যদি কেউ আরও ভাত চেয়ে বসে.!

সকল বন্ধুরা পেট ভরে খেয়ে স্বামী কে বলল, "জনি তুই আর আগের মতো খেতে পারিস না কেন রে? তোর থালায় দেখি অর্ধেক খাবারই রয়ে গেছে।"

স্বামী ভালো করেই জানেন যে তাদের ঘরে আর খাবার নেই। কেননা রান্নাঘরে স্বামী দেখেছেন যে খাবারের পরিমাণ খুব বেশি নয়। স্বামী মুচকি হেসে বললেন, "দোস্ত আসলে আমি না কয়েকদিন ডায়েট এ আছি। পেট টা বেশ ভুঁড়ি হয়ে গেছে। আর তোর ভাবীও বকা দেয়। পরে যদি সে আমাকে ছেড়ে দেয়! তাই আমি আমার পেট কে ছেড়ে দিচ্ছি।" বন্ধুমহলে তখন হাসির রোল পড়ে গেল।

বন্ধুরা সবাই যার যার বাড়িতে চলে গেল। স্ত্রী তখন কাছে এসে তাঁর স্বামী কে জিজ্ঞেস করলেন, "আপনি বন্ধুদের মিথ্যে বললেন কেন? আপনি তো কখনো ডায়েট করেননা!"

তখন স্বামী তখন বললেন, "আমি তো দেখেছি রান্নাঘরে খাবার কম। তার উপরে বাজার-টাজার কিছুই হয়নি৷ আর তোমাকেও আমার ভালোকরে চেনা৷ তুমি একবেলা উপোষে ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু বলবেনা। তাই আমি অর্ধেকটাই খেলাম, বাকীটা এখন তুমি খেয়ে নিও। কি খাবেনা?"

স্ত্রী তখন কেঁদে ফেললেন। স্বামী তার স্ত্রীর চোখের জলটা মুছে দিয়ে বললেন, "আহহা নাদিয়া কাঁদছো কেন? আচ্ছা আস আমি নিজের হাতে আজ খাইয়ে দিই।"


writer: Nishan Bunarjee

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন