সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

গল্প: সাইকোপ্যাথ ( পর্ব ১ )

বিশাল বড়ো পার্টির মাঝে হঠাৎ করে তাসনুভাকে জড়িয়ে ধরে ওর নরম মিষ্টি গোলাপি ঠোঁটটাকে নিজের করে নিল আরিয়ান। তাসনুভাসহ পার্টিতে উপস্থিত সবাই স্তব্ধ হয়ে আছে৷ শুধু তাই নয়, তাসনুভার ফিয়ন্সেও এই দৃশ্য দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত একটি মুহূর্ত তৈরি করবে সেটা কেউ ভাবে নি। এদিকে তাসনুভা ওকে সরানোর জন্যে অনেক বল প্রয়োগ করছে। কিন্তু আরিয়ানের পুরুষালি শক্তির কাছে সে বল কিছুই না। আরিয়ান যেন তাসনুভার মিষ্টি স্বাদে হারিয়ে গিয়েছে, ওকে ছাড়ছেই না। তবে এ দৃশ্য তাসনুভার ফিয়ন্সে মানে রিহান বেশিক্ষণ আর দেখতে পারে না। ও ওদের কাছে এসে আরিয়ানকে জোরে হেচকা টান মেরে দূরে সরিয়ে দেয়৷ আরিয়ানের বডিগার্ডরা রিহানের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আরিয়ান তাদের থামিয়ে দেয়৷ তাসনুভা হাপাচ্ছে রিহানের পাশে। আরিয়ান ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে তাসনুভার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে৷ তাসনুভার কাছে এই হাসিটি এখন বিষের মতো লাগছে৷ ওর প্রচন্ড অস্বস্তি আর রাগ লাগছে৷

এবার বলা যাক এই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনাটির শুরুটি। কিছুদিন আগে রিহান আর তাসনুভার বিয়ে ঠিক হয়েছে পারিবারিক ভাবে৷ তাসনুভার বাবা এবং রিহানের বাবা দুইজনই অনেক বড়ো বিজনেসম্যান। শুধু তাই না তারা বিজনেস পার্টনারও। তাই তাদের এই পার্টনারশিপটি আত্নীয়তে পরিণত করার জন্য তাদের দুজনার ছেলে ও মেয়ের বিয়ে ঠিক করেন একসাথে৷ তাসনুভা এবং রিহান দুইজনই এই বিয়েতে সম্মতি পোষণ করেছে। তাই ওদের বিয়ে ঠিক হওয়া উপলক্ষে ওদের বাবারা আজ একটি বড়ো পার্টির আয়োজন করেন৷ এই পার্টির মাধ্যমে ওদের বিয়ের তারিখও ঠিক করার কথা ছিল। ওদের বাবারা এই পার্টিতে অনেক বড়ো বড়ো বিজনেসম্যানদের ইনভাইট করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হলো, আরিয়ান৷ ওয়ার্ল্ড ফেমাস কোম্পানি, আরিয়ান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি এর একমাত্র মালিক আরিয়ান নিজে৷ বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মালিক ও। রিহানের বাবা এবং তাসনুভার বাবার বিজনেসকে ও হাজার বার কেনার ক্ষমতা রাখে৷ তো পার্টিতে নাচের আয়োজন করা হয়৷ এটি এমন একটি নাচ, যেখানে গানের সাথে সাথে নাচের পার্টনার পরিবর্তন হয়। ঠিক সেই মোতাবেক আরিয়ানের নাচার পার্টনার যখন তাসনুভা হয়, ও আর পার্টনার পরিবর্তন করে না। তাসনুভার মুক্তার মতো জ্বলজ্বল নয়নের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণায় মুচকি একটি হাসি নিয়ে আরিয়ান ওর সাথে নাচতে থাকে৷ নাচার একপর্যায় গান বন্ধ হলে, তাসনুভা কিছু বুঝার আগেই ওর গোলাপি ঠোঁটটা আরিয়ান দখল করে নেয়৷
এবার বর্তমান অবস্থায় ফিরে আসা যাক। আরিয়ান হঠাৎ করে তাসনুভার পুরো পরিবারের সামনে এমন অস্বাভাবিক একটি আচরণ করলো। ফলে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে আছে৷ কারো কোন সাহস নেই ওর বিরুদ্ধে কিছু বলার। কারণ সবাই আরিয়ানের আন্ডারে। কেউ ওর দিকে আঙুল তুললে তার লাইফ ও শেষ করে দিবে। তাই সবাই চুপ করে আছে৷ কিন্তু হঠাৎই রিহান তাসনুভার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ক্ষিপ্ত স্বরে আরিয়ানকে বলে,
- আমার ফিউচার ওয়াইফের সাথে আপনি এটা কি করলেন? এর মানে কি?
আরিয়ান হাসতে হাসতে রিহানের কাছে আসে। তাসনুভার দিকে একবার তাকিয়ে রিহানের কলারটি ঠিক করে দিতে দিতে বলে,
- আমার ফিউচার ওয়াইফের সাথে আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। সেটির উত্তর কি আপনাকে দিতে হবে মিস্টার রিহান?
রিহানের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায় আরিয়ানের কথা শুনে। রিহানের পরিবার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওর বাবা দ্রুত এসে বলে,
- বাবা এ তুমি এটা কি বলছো? তাসনুভা তোমার ফিউচার ওয়াইফ কেমনে? রিহানের সাথে তো ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
- হয়েছে তো কি হয়েছে? সেটি বাদ এখন৷ কারণ ওর বিয়ে এখন আমার সাথে হবে। (তাসনুভার কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলল)
পার্টির সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। তাসনুভা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ও আরিয়ানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
- আপনার কি মাথা ঠিক আছে? এসব কি বলছেন আপনি?
পাশ হতে রিহানও জোর গলায় বলে উঠে,
- এটি অসম্ভব! আমি তাসনুভাকেই বিয়ে করবো। আপনি অর্থের জোরে এভাবে আমাদের সম্পর্ক ভাঙতে পারেন না৷
আরিয়ান অট্টো হাসিতে ভেঙে পড়ে। ও হাসতে হাসতে বলে,
- এটি বাস্তব জীবন। এখানে অর্থের জোরই সব। মিস্টার ইলিয়াস, আপনি আপনার ছেলে এবং পরিবার নিয়ে বাসায় চলে যান। নাহলে সামনে কি হবে তার দায়ভার কিন্তু আমার নয়।
- বাবা আমরা কোথাও যাবো না। উনি যা বলবেন আর তাই হবে? কখনো না। তাসনুভা শুধু আমারই হবে৷ (রিহান)
তাসনুভার বাবা-মা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। কারণ তারা জানেন আরিয়ান কতটা খারাপ। তাসনুভার বাবা তার বিজনেস লাইফে অনেক সমস্যায় পড়েছেন এই আরিয়ানের জন্য৷ আরিয়ান হেসে হেসে কথা বলে অনেকের বিজনেস শেষ করে দিয়েছে। তা তাসনুভার বাবা বেশ ভালো ভাবেই জানেন৷ কিন্তু সেটি জানে না রিহান। তাসনুভাকে নিয়ে এভাবে বলায় হঠাৎই আরিয়ানের মুখখানা গম্ভীর হয়ে যায়। ও অনেকটা রাগী ভাবে রিহানের দিকে তাকায়। তারপর পাশে সোফাতে বসে ওর পার্সোনাল সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে একটি ইশারা করে। ব্যাস, মাত্র দশ মিনিট পর একটি কল আসে রিহানের বাবা ইলিয়াস সাহেবের কাছে৷
- হ্যালো স্যার...
- হ্যাঁ রাসেল বলো।
- স্যার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।
- মানে! কি হয়েছে? (পার্টির সবাই রিহানের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। তাসনুভাও। আর আরিয়ান ওর ফোন চালাচ্ছে। রিহান ওর বাবার কাছ হতে ফোন নিয়ে লাউড স্পিকারে দিয়ে দেয়)
- স্যার আরিয়ান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিস আমাদের ডিলারশিপ বাতিল করে দিয়েছে। শুধু তাই না আমাদের কোম্পানিকে ব্যাংকক্রপ্ট করে দিয়েছে। আমরা তো পথে চলে এসেছি স্যার।
রিহানের বাবা সাথে সাথে অস্থির হয়ে যায়। রিহান তো পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর বাবা দ্রুত আরিয়ানের কাছে এসে বলে,
- বাবা আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দেও। ও বুঝতে পারে নি। তুমিই তাসনুভাকে বিয়ে করো আমরা এখনই চলে যাচ্ছি। দয়া করে আমাকে নিঃস্ব করো না। আমার কোম্পানিটি আমাকে ফিরিয়ে দেও। দয়া করো বাবা।
- এটি তো আপনাদের আগে ভাবা উচিৎ ছিল। আপনার ছেলে কিভাবে আমার তাসনুভাকে তার নিজের বলে?
- রিহান তুই তাড়াতাড়ি মাফ চা। নাহলে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে৷ রায়হান বন্ধু আমার প্লিজ তুই একটু বল।
তাসনুভার বাবা মানে, রায়হান সাহেব এবার আরিয়ানকে বলেন,
- বাবা আরিয়ান, ইলিয়াস আমার অনেক ভালো একটি বন্ধু আর বিজনেস পার্টনার। দয়া করে ওর এমন ক্ষতি করো না প্লিজ। তোমার হাত জোর করছি। আমার মেয়ের জন্য ওর কোন ক্ষতি হলে আমি মানতে পারবো না।
- ছিঃ ছিঃ আঙ্কেল আপনি এভাবে বলবেন না। আমার তো খারাপ লাগে তাই না৷ (সোফা ছেড়ে উঠে বসে বলল)
আরিয়ান তাসনুভার দিকে তাকিয়ে দেখে তাসনুভার চোখে ওর জন্য অনেক ঘৃণা জমে আছে। আরিয়ান হাসি দিয়ে সেটি পাত্তা না দিয়ে রিহানের বাবাকে বলে,
- শুধুমাত্র আঙ্কেল বলায়, আপনাদের সাথে একটি ডিল করতে চাই। আপনার কোম্পানির বর্তমান মূল্য ৩০০ কোটি টাকা। যেটা এখন শূন্য। কারণ আমার ডিলারশিপ বাতিল করে দেওয়ায়। তবে আপনারা চাইলে আমি আমার ডিলারশিপটা আবার ফিরিয়ে দিব সাথে আরো ৩০০ কোটি টাকা দিব তাসনুভার সাথে বিয়েটি ভাঙার জন্য। বলেন ডিলটায় রাজি কিনা?
সবাই একে অপরের সাথে বলাবলি করছে,এই তো আরিয়ান আবার ওর চিকন বুদ্ধি চালিয়ে গেইম খেলে ওর প্ল্যান পাস করছে। আরিয়ান ইলিয়াস সাহেবের দিকে তাকিয়ে তার উত্তরের অপেক্ষা করছে। সে কিছু বলতে যাবে ওমনি পাশ হতে সবাইকে ভীষণ মাত্রায় অবাক করে দিয়ে রিহান বলে উঠে,
- ৩০০ কোটি না, ৫০০ কোটি চাই।
আরিয়ান রিহানের দিকে তাকিয়ে অট্টো হাসি দিয়ে বলে,
- বাহ! এই না হলো বিজনেসম্যান। ওকে ডিল। ৫০০ কোটিই দেওয়া হবে। নাতাশা দিয়ে দেও।
আরিয়ান ওর পার্সোনাল সেক্রেটারিকে আদেশ দেওয়া মাত্রই ৫ মিনিট পর ইলিয়াস সাহেবের কাছে কল আসে যে, তার কোম্পানি আবার ফিরে এসেছে আর সাথে ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকাও এসেছে। ইলিয়াস সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। রিহান তাসনুভার কাছে গিয়ে বলে,
- সরি তাসনুভা, আরিয়ান স্যার ঠিক বলেছেন, টাকার জোরই সবচেয়ে বেশি। আসি, ভালো থেকো।
রিহান ওর পরিবার নিয়ে চলে যায়। আরিয়ান হাসতে থাকে শুধু। হাসতে হাসতে তাসনুভার বাবার কাছে গিয়ে বলে,
- এই ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছিলেন? বিয়ের আগেই হবু বউকে কিছু কাগজের কাছে বিক্রি করে দিয়ে চলে গেল। হায়! আপনিও না আঙ্কেল মানুষ চিনলেন না। (কথাটি শেষ করলো তাসনুভার দিকে তাকিয়ে)
তাসনুভার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। আরিয়ান ওর পাওয়ার দিয়ে সবকিছু কেমন ঘোলাটে করে দিয়েছে। তাসনুভা রিহানকে নিয়ে কতকিছু ভেবে ছিল কিন্তু এখন সব কেমন জানি হয়ে গেল। ওর খুব খারাপ লাগছে। রায়হান সাহেবকে আরিয়ান আবার বলে,
- তাহলে আঙ্কেল আগামী মাসের ৫ তারিখ তাসনুভাকে আমি বিয়ে করছি। আর আমাদের বিয়ে হবে প্যারিসে। গ্রান্ড ওয়েডিং হবে। দেশ বিদেশের লোক আসবে আমাদের বিয়ে৷ সো প্রস্তুতি শুরু করে দিন৷
রায়হান সাহেব কিছু বলার আগেই তাসনুভা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠে,
~ আমি মরে গেলেও আপনার মতো কাউকে বিয়ে করবো না। কখনো না।
আরিয়ান ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে তাসনুভার কানের কাছে গিয়ে বলে,
- রিহানের বাবার মতো অবস্থা যদি তোমার বাবার না চাও চুপচাপ বিয়েতে রাজি হয়ে যাও। নাহলে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিণতি খুব খারাপ হবে৷ আশা করি তোমার মাকে এত তাড়াতাড়ি একা করতে চাও না তুমি।
বলেই হাসি দিয়ে দূরে সরে আসে আরিয়ান। তাসনুভা চোখগুলো বড়ো বড়ো করে আরিয়ানের দিয়ে তাকিয়ে আছে। কতটা ডেঞ্জারাস কথা বলেছে ও মাত্র। তাসনুভা একবার ওর মা আরেকবার ওর বাবার দিকে তাকাচ্ছে। ওর খুব ভয় লাগছে৷ আরিয়ান রায়হান সাহেবের কাছে গিয়ে বলে,
- তাহলে আঙ্কেল আজ আসি। এখন হতে সবসময় দেখা সাক্ষাৎ হবে আমাদের। কোন চিন্তা করবেন না৷
- আচ্ছা।
আরিয়ান তাসনুভার দিকে তাকিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে ওর বডিগার্ড আর সেক্রেটারি নিয়ে চলে আসে। তাসনুভা ওর মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদতে থাকে। আরিয়ানের বলা কথাগুলো শুনে ওর আরো বেশি ভয় আর খারাপ লাগছে। আরিয়ান পার্টি হতে বের হতে হতে ওর ঠোঁটটা ছুঁয়ে মনে মনে বলে,
- নাহ! ঠোঁটের স্বাদটা আবার নিতে হবে৷ মনটি ভরে নি। হাহা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন