সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

গল্প: সাইকোপ্যাথ ( পর্ব ৩ )

তাসনুভা বুঝে ফেলছে আরিয়ান এখন কি করবে৷ ও সবার আগে হাত দিয়ে ওর ঠোঁট ঢেকে ফেলে। আরিয়ান বেডের উপর উঠে তাসনুভার একদম কাছে চলে যায়। তাসনুভা আর পিছনে না যেতে পেরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আরিয়ান ওর একদম কাছে গিয়ে একটি মুচকি হাসি দিয়ে ওর দুচোখে চুমু এঁকে দিয়ে সরে আসে। তাসনুভা ভীষণ অবাক হয়।

ও চোখ মেলে তাকালে আরিয়ান ততক্ষণে বেড ছেড়ে নেমে দাঁড়িয়ে যায়৷ তাসনুভাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

- আর যেন এই সুন্দর চোখগুলো কান্নাসিক্ত না দেখি। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমার সাথে বের হবে।
তাসনুভা ঠিক বুঝতে পারছে না ও কেমন রিয়েক্ট করবে। আরিয়ানকে এখন দেখে মনে হচ্ছে, সে কত ভালো একজন মানুষ, ওর কত কেয়ার করছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই তাসনুভা অনুভব করে আরিয়ান ভালো মানুষ না। আজ ওর জন্যই তাসনুভার বিয়েটি ভেঙেছে। আর জোরপূর্বক এই শয়তান আরিয়ানকে এখন ওর বিয়ে করতে হবে। তাসনুভা একলাফে বেড ছেড়ে রাগী ভাবে ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে বলে,
~ আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷
বলেই ও ফ্রেশ হতে চলে যায়। এদিকে আরিয়ান যেন তাসনুভার কোন কথার পাত্তাই দেয় নি৷ ও ওর মতো করে তাসনুভার রুমটি দেখছে। বেশ গুছানো, সুন্দর ডিজাইন করা রুমটি। যাকে বলে সিম্পলের ভিতর গর্জিয়াস। আরিয়ান জানালার কাছে গিয়ে নাতাশাকে মানে ওর পার্সোনাল সেক্রেটারিকে কল দেয়।
~ হ্যালো স্যার...
- আজ কয়টি মিটিং আছে?
~ স্যার চারটি
- সব ক্যান্সেল করে দেও৷ তোমার ভাবীকে নিয়ে ব্যস্ত আমি।
~ কিন্তু স্যার ক্ষতি হবে তো...
- আচ্ছা তুমি পারবে মিটিং গুলো সামলাতে?
~ সিউর স্যার৷ আমি আমার সবটা দিয়ে ট্রাই করবো।
- থ্যাঙ্কিউ নাতাশা। গুড লাক তাহলে।
~ ওকে স্যার।
আরিয়ান ফোন রেখে দিয়ে পিছনে ঘুরতেই দেখে তাসনুভা ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান তো তাসনুভাকে দেখে হা করে আছে। ওকে পরিপাটি অবস্থায় দেখে খুব ভালো লাগছে৷ তাসনুভা বলে উঠে,
~ আপনি এখনো আমার রুমে! আর এভাবে কি দেখছেন? আগে কখনো মেয়ে দেখেন নি?
আরিয়ান একটি হাসি দিয়ে আচমকা তাসনুভার হাত ধরে টান মেরে ওকে জড়িয়ে ধরে। তাসনুভা মুহূর্তেই চমকে উঠে। ও আরিয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। কিন্তু কোন লাভ হয় না। আরিয়ান তাসনুভাকে ওর সাথে জড়িয়ে ধরে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
- হাজার মেয়ে দেখেছি আমি। কিন্তু আমার হবু বউয়ের মতো এত লাজুকলতা, মায়াবী, কোমল মনের কাউকে দেখি নি। যে আমার মনটাকে একদম কেড়ে নিয়েছে।
তাসনুভা আরিয়ানের কথা শুনে আর নিজেকে ওর বাহুডোরে আবদ্ধ দেখে ওর মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ ও খুব রাগী ভাবে বলে উঠে,
~ মিস্টার আরিয়ান আমাকে ছাড়ুন। ছাড়ুন বলছি আমাকে।
- ছাড়বো না কি করবা?
~ আমি চিৎকার করবো।
- পারলে করো তারপর দেখো কি হয়। (তাসনুভার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল)
~ আপনি কেন আমার সুন্দর জীবনে এসে এভাবে অশান্তি করছেন? কেন? আমি কি অপরাধ করেছি যার শাস্তি এখন আমাকে পেতে হচ্ছে?
আরিয়ান তাসনুভার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। তাসনুভার চোখে পানি৷ আরিয়ান ওকে ছেড়ে দিয়ে আঙুল দিয়ে তাসনুভার দুচোখ মুছে দেয়৷ আর বলে,
- কাউকে কাঁদলে যে এত সুন্দরী লাগে আগে জানতাম না। উফফ! মনটা ছুঁয়ে গেল।
তাসনুভার মন চাচ্ছে ও এখনই মরে যাক। নাহলে আরিয়ানের মাথা ফাটিয়ে ওকে মেরে ফেলুক৷ প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আফিয়ানের উপর৷ কতটা খারাপ মানুষ ও, যে একটি মেয়ে কাঁদছে আর সে মজা নিচ্ছে। আরিয়ান আবার বলে উঠে,
- অনেক কান্নাকাটি হয়েছে এবার নাস্তা খেয়ে আমার সাথে বের হবে চলো।
~ আমি কোথাও যাবো। আমি রুম থেকে বেরই হবো না৷ (বেডে বসে বলল)
আরিয়ান আস্তে আস্তে তাসনুভার কাছে গিয়ে ওর সামনে ফ্লোরে বসে। তারপর ওর হাত দুটো ধরে দেখতে দেখতে বলে,
- এতক্ষণ ভালো ভাবে বলেছি শোনো নি৷ এবার একটু খারাপ ভাবে বলছি। তুমি যদি ভদ্র মেয়ের মতো এখন আমার সাথে ঘুরতে বের না হও তাহলে এর পরিণাম কি হবে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আচ্ছা দাঁড়াও তোমাকে একটু দেখাই৷
আরিয়ান ওর পিছনে হাত দিয়ে একটি বিদেশি মিলিটারি পিস্তল বের করে তাসনুভাকে দেখায়। পিস্তল দেখে তাসনুভার কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে যায়। ও ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ আরিয়ানকে এখন হিংস্র বাঘের মতো লাগছে৷ আরিয়ান দাঁড়িয়ে যায়৷ আর রাগী ভাবে বলে,
- জাস্ট একটি গুলি করলেই তোমার খেল খাতাম তাসনুভা। করবো? করি? মাত্র একটি গুলি। করলাম কিন্তু।
তাসনুভা আরিয়ানের পা ধরে ভয়ে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
~ না না আমি মরতে চাই না। আমার বাবা-মাকে ছেড়ে আমি মরতে চাই না। আমি যাব যাব। প্লিজ আমাকে মারবেন না৷ আমি যাবওওও....
- এইতো এখন না লাইনে এসেছো। এতক্ষণ ভাব নিচ্ছিলা কার সাথে হ্যাঁ? আমি ভালোর ভালো আর খারাপের চরম খারাপ। আমি নিচে গেলাম চোখ মুছে চলে এসো।
বলেই আরিয়ান রাগী ভাবে চলে গেল। তাসনুভা এখনো ভয় পাচ্ছে অনেক। ও দ্রুত কোন রকম নিজেকে সামলে চোখেমুখে পানি দিয়ে নিচে নাস্তা খেতে চলে আসে। এসে কোন কথা বলে না৷ আরিয়ান একাই তাসনুভার বাবা-মার সাথে কথা বলছে। তাসনুভা আড়চোখে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে একটু আগের আরিয়ান আর এখনকার আরিয়ানের মাঝে আকাশ পাতালের পার্থক্য। নাস্তা খাওয়া শেষ হলে আরিয়ান বলে উঠে,
- আঙ্কেল আন্টি আমি কি তাসনুভাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে পারি?
তাসনুভা ওর মাকে ইশারায় না না বলছে৷ কিন্তু ওর বাবা বলে উঠে,
- হ্যাঁ বাবা অবশ্যই যাও।
- থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ আঙ্কেল। যাও তাসনুভা রেডি হয়ে আসো। আমি অপেক্ষা করছি। (তাসনুভার দিকে একটি অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল)
তাসনুভা ভয়ে দ্রুত রেডি হতে চলে যায়। ওর রুমে এসে ও বেডের উপর বসে আছে অসহায়ের মতো। তাসনুভার মনে হচ্ছে ওর গলার কাছে ওর জানটা আটকে আছে৷ কিচ্ছু ভালো লাগছে না ওর। ওর জীবনের গল্পটি হঠাৎ করে কেন এমন অগোছালো, বিশৃঙ্খল হয়ে গেল! তাসনুভা উত্তর খুঁজে পায় না। ও আর এত পেইন নিতে পারছে না। তাসনুভা কখনোই জোড়াজুড়ি পছন্দ করে না৷ ওর অশান্তি লাগে কেউ ওর সাথে জোড়াজুড়ি করলে। সেখানে আরিয়ান ওকে ব্ল্যাকমেইল সহ আরো কত কিছু করছে৷ তাসনুভা মনে মনে বলে,
~ আমাকে নিয়া তোর ঘুরার সখ না। দাঁড়া, তোর ঘুরার সখ আমি মিটাচ্ছি। তুই আর জীবনে আমার কাছে আসবি না আরিয়ান।
তাসনুভা ওর আলমারি থেকে সবচেয়ে পুরনো ড্রেসটি বের করে পরে। আর এমন ভাবে মেক আপ করে যে কেউ দেখলে বমি করে দিবে৷ আধা ঘণ্টা নিজের উপর এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে তাসনুভা নিচে আসে। সিড়ি বেয়ে নিচে আসতেই আরিয়ান সহ তাসনুভার বাবা-মা তাসনুভাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। তাসনুভা আরিয়ানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান হা করে তাসনুভার দিকে তাকিয়ে আছে। তাসনুভার মা এই দৃশ্য দেখে বলে উঠে,
~ তাসনুভা এসব কি? এগুলো কি পরেছিস? আর ফেইসের এ কি অবস্থা করেছিস? ছিঃ মা।
- হ্যাঁ এসব কি তাসনুভা? এভাবে কেউ বাইরে যায়৷ (বাবা)
তাসনুভা শুধু আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও অপেক্ষায় আছে কখন আরিয়ান ওকে ঘৃণা করে চলে যাবে৷ কিন্তু ওর সমস্ত চিন্তাভাবনাকে ওলট-পালট করে দিয়ে আরিয়ান অট্টো হাসিতে ভেঙে পড়ে। সেকি ওর হাসি! ওর হাসি দেখে তাসনুভা ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে৷ আরিয়ান হাসতে হাসতে ওর ফোনটি বের করে তাসনুভার একটি ছবি তুলে ফেলে৷ সেই ছবি ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে,
- দেখো কত সুন্দর লাগছে তোমাকে। হাহা।
তাসনুভা শুধু হতভম্ব হয়ে আছে৷ ও ভেবেছিল আরিয়ান যা তা বলে চলে যাবে৷ কিন্তু হলো তার উল্টো। আরিয়ান হাসতে হাসতে বলে,
- চলো যাওয়া যাক।
~ এহহ! এভাবে?
- জি এভাবেই। কেন তুমিই তো এভাবে বের হবে বলে সেজে এসেছো তাই না? চলো চলো।
আরিয়ান তাসনুভার বাবা-মার সামনে ওর হাত ধরেই ওকে নিয়ে বাসার বাইরে চলে আসে। ওকে টেনে পার্কিং লটে নিয়ে আসে। এনে বলে,
- গাড়িতে উঠো।
তাসনুভা অসহায়ের মতো মুখ করে মাথা নাড়িয়ে না না বলে। আরিয়ান চোখ গরম করে বলে,
- গাড়িতে উঠতে বলছি। নাহলে..
তাসনুভা ভয়ে ভয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে। আরিয়ানও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। তাসনুভার বাবা-মা ওদের বিদায় দিলে আরিয়ান চুপচাপ গাড়ি চালাতে শুরু করে। তাসনুভাও পাশে চুপচাপ বসে আছে। তবে ও বুঝতে পারছে আরিয়ান ওকে আড়চোখে দেখছে আর মিটমিট করে হাসছে৷ কিছু দূর এসে আরিয়ান হঠাৎই গাড়িটা থামায়৷ আর টিস্যুর বক্সটি এগিয়ে দিয়ে বলে,
- মেক আপ মুছে ফেলো। নাহলে এভাবেই রাস্তায় নামাবো তোমাকে।
তাসনুভা ভয়ে দ্রুত মেক আপ মুছতে থাকে৷ কিন্তু হায়! ও এমন মেক আপ করেছে যে উঠছেই না৷ আরিয়ান রাগী ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাসনুভা কান্না করে দিবে দিবে এমন অবস্থা। আরিয়ান আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে। ওর মুখটা একদম শক্ত হয়ে আছে। তাসনুভা ভয়ে তাকাতেও পারছে না। আধা ঘণ্টা গাড়ি চলার পর তাসনুভা নিজেকে আবিষ্কার করে একটি বিশাল বড়ো বাসার সামনে। অনেক বডিগার্ড বাসার আশে পাশে। সবাই আরিয়ানকে সালাম দিচ্ছে। আরিয়ান গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তাসনুভা আস্তে করে জিজ্ঞেস করে,
- এটি কার বাড়ি?
- আমার।
তাসনুভা যে ভয়টি পেয়েছিল সেটাই হলো। ওর মনে এখন একটাই প্রশ্ন, ওকে এখানে কেন আনলো? কি করবে আরিয়ান এখন ওর সাথে?

লিখেছেন: আবির

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন