বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

গল্প: হিসেবে গন্ডগোল

অনেক বছর ধরে আমি মেসে থাকি। মা,মামা, ভাই এসে উঠিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম সবাইকে ছেড়ে বাড়ির বাহিরে। সবাই বিদায় নিয়ে ফিরে গেলেন বাড়িতে। আমি বসে বসে কাঁদতেছিলাম আর নাড়ু খাচ্ছিলাম। আম্মুর বানিয়ে দেয়া নাড়ু।নাড়ু খেতে খেতে ভাবছিলাম প্রতিমাসে কতো টাকা খরচ হয় হিসেব রাখতে হবে।

এরপর হতে প্রতি মাস বোধ হয় আমার জীবনে আসেনি। মানে প্রত্যোক মাসের শুরুতে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সামনের মাসে রাখবোই  হিসেব। কোথায় কি কোনো পরিবর্তন নেই। যদিও আমি হিসেবি মেয়ে ছিলাম। অনেকেই জিজ্ঞেস করতেন প্রতিমাসে কতো খরচ হয়? আমি হাসি মুখে নিজেকে মনে মনে ব্যঙ্গ করে উত্তর দিতাম “আমি জানিনা,বলতে পারিনা।” এই বলে। যখন কেউ এমন প্রশ্ন করতেন তখন আবার নতুন উদ্যমে নিজেকে নিজে বলতাম এ মাসে হিসেব রাখতেই হবে দুনিয়া উল্টে যাক তবু আমি বাপু উল্টোবো না। সামনের মাসে একটি লিস্ট করবো সে অনুযায়ি বাজার করবো।



আমরা কয়েকজন মিলে ফ্লাট ভাড়া করে থাকতাম। যারটা সে রান্না করেই খেতাম আরকি। এভাবে বহুবার কল্পনাতে আমি লিস্ট করেছি।মানুষের স্বপ্ন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আর আমার তখন স্বপ্ন ছিলো একটি সফল বাজারের লিস্ট করা।ফাইনালি আমি বাজারের লিস্ট করলাম এবং সুন্দর করে ভাজ দিয়ে ব্যাগের সামনের পকেটে রাখলাম রাস্তা হতে হাঁটার পরিবর্তে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছি যেন। আবার  নিজেকে কেমন যেনো রাজা-বাদশা মনে হচ্ছে।হবেনা,  সফলভাবে লিস্ট করেছি যে মনেতো হবেই।অর্ধেক পথ যাবার পর ফোন বেজে উঠলো ফোনটি রিসিভ করার পর শুনি অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দিয়েছে। 

আমি এক দৌঁড়ে একটি দোকানে গিয়ে বললাম ভাই রেজাল্টটি বেড় করে দিন। ওনি রেজাল্ট বের করার চেষ্টায় আছেন আমার মনে একদিকে সফলভাবে লিস্টের কাজ সম্পন্ন করার কথা ভাবছে অন্যদিকে রেজাল্ট রেজাল্ট করছে।অবশেষে রেজাল্ট জেনে খুশি হয়ে বাজারে ঢুকলাম। বাজার করলাম লিস্ট ধরে ধরে এবং প্রত্যেকটির সামনে দাম লিখে রাখলাম।বাজার করা শেষে লিস্টটি আমি আমার হ্যান্ডপার্সে রেখে বাড়িতে ফিরলাম। আমি তো মহাখুশি এবার অন্তত কেউ মাসে কতো খরচ হয় জিজ্ঞেস করলে গঠনমূলক উত্তর দিতে পারবো। রাত দশটার সময় আমার মনে হলো এবার লিস্ট বেড় করে হিসেবটি করে নেই তাহলে। একি কান্ড ব্যাগ কোথায় ব্যাগ পাচ্ছিনা। খুঁজে খুঁজে হয়রান, ব্যাগ কোথায়? ব্যাগের ভেতর তো আমার স্বর্নের চেইন আছে,তিন হাজার টাকা এবং লিস্ট এই বলে মন খারাপ করে বসে আছি, রুমমেট আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।আমি রাত দশটায় আবার বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি থেকে ব্যাগ খুঁজতে। ওখানে আমার এত বছরের সাধনার লিস্ট আছে লিস্ট।

লিখেছেন: জান্নাত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন