সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রথম উপসংহারে তুমি

অন্যান্য সকাল হতে শীতের সকালটা একটু পৃথক,আর কিছুটা বৈচিত্র্যময়। আজকে হঠাৎ ফজর নামাজ শেষে বের হলাম ইরাথীকে সাথে নিয়ে। শহরের কিছুটা একপাশে আমাদের আবাসস্থল। পাশেই হাটার একটি রাস্তা,যার দুপাশে শিরীষ ও মেহগনি গাছের সারি। শীতের মাঝামাঝি হওয়ায় বেশ কুয়াশা পড়েছে। ঘন কুয়াশার আচ্ছাদনে আবছা আবছা দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছে। গায়ে চাদর জড়িয়ে, ইরাথীর হাতটি ধরে হেটে যাচ্ছি। টুকটাক কথা হচ্ছে।দুজনের মাঝে অন্যরকম এক অনুভূতি দোলা দিচ্ছে।

বাইরের পরিবেশ শীতল আবহ ধারণ করলেও আমার মোটেও তা অনুভূত হচ্ছে না। হয়তোবা ভালোবাসার মানুষটি পাশে আছে বলে এমনি হচ্ছে। চারপাশে কত কী ঘটে যায়, মানুষের অন্তরের নিগূঢ়তম প্রদেশে কত কথা,কত আকাঙ্খা আবর্তিত হয়, কত পুরনো স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে রোমন্থিত হয় তার হিসাবই-বা কে রাখে? সবকিছু বুঝেই-বা ক'জনে?হাটতে হাটতে বিলের ধারে চলে এলাম। জলাশয়টিতে আছে লাল শাপলা। দিনের প্রথমভাগে শাপলারা ফুটন্ত থাকে। লাল শাপলার এ গালিচার মাঝে অতিথি পাখিদের আনাগোনাও পরিলক্ষিত হয়।তাজরিয়ান,আজ হঠাৎ তুমি আর আমি এখানে। 

আমার অনেক দিনের একটি স্বপ্ন ছিলো। শীতের কোনো এক ভোরে, ঘন কুয়াশায়, গায়ে চাদর মুড়িয়ে প্রেমিকার হাত ধরে হাটা, তাকে জড়ায় ধরে রাখা, একসাথে দুইকাপ চা খাওয়া, এবং কিছু কথোপকথন! আজ সেই ইচ্ছেটি সৃষ্টিকর্তা পূরণ করলেন।

তুমি বিয়ের আগে কাউকে ভালোবাসতে?

হুম,বাসতাম। আজ থেকে ৯ বছর আগে তাকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। সে প্রত্যাখ্যান করেছিলো।

এখন সে কোথায়?

আছে! সে এখন ডাক্তার। 

ওহ,আমার মতো।

হ্যা।

একটু জড়িয়ে ধরবে আমায়! 

জড়িয়েই তো ধরে আছি।

আরো শক্ত করে ধরো।জানো,যাকে হৃদয় আপন ভাবে, তাকে ভালোবাসার বাহুডোরে বেঁধে ফেলাতেই প্রেমের সার্থকতা।

ভালোবাসা প্রকাশে নয়, অনুভবে পূর্নতা পায়। যার ভালোবাসা যত গভীর তার ভালোবাসা তত নিরব তত গোপন।

হুমম,কিন্তু উপলব্ধি ক'জনের ই বা হয়!

চলো,এগোই।

হুম,চলো।

হাটতে হাটতে অতি পরিচিত চায়ের দোকানটির সামনে এলাম। আকরাম চাচা, সবে মাত্র দোকান খুলেছে। বলা চলে, আজকে আমরাই তার দোকানের প্রথম কাস্তমার। আকরাম চাচাকে দুই কাপ চা দিতে বলে আমরা বেঞ্চিতে বসলাম। চাচা জানালো, একটু দেরী হবে চা তৈরি হতে। সবে মাত্র দুধ জ্বাল শুরু হয়েছে। আমরা দুজন বসে গল্প করতে লাগলাম।আজ হঠাৎ ইরাথীকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। শরৎতের সেই বিকেলে ঠিক যেমনটা লাগছিলো।ইরাথীর দিকে তাকিয়ে কেন যেনো মুখে ফুটে বেড়িয়ে এলো,

'অতসী' 

কিছু বললে!

না না। কিছু না। 

জানো, তাজরিয়ান নামটি আমার খুব পছন্দের। 

নামটি আমার মা আমাকে দিয়েছিল।

আজ আদিল যদি বেচে থাকত?

মৃত্যু মানেই কি সবকিছুর শেষ হয়ে যাওয়া। 

হয়তো না।মৃত্যু দ্বারাই হয়তো নতুন অধ্যায়ের শুরু... 

হুমমম । 

চাচা দুকাপ চা আমাদের দিয়ে গেলো।ধোয়া উঠা গরম চায়ের কাপে দুজন চুমুক দিলাম। আমি মুচকি হাসি দিয়ে মনে মনে বললাম,আমাকে প্রত্যাখ্যান করা সেই মেয়েটি তুমিই... অতসী কিংবা ইরাথী যাই বলি না কেনো। তুমি আজ আমার স্ত্রী,আমার সাথে বসে শীতের কোনো এক ভোরে  চা খাচ্ছো,এর সবকিছুর সূত্রপাত সেই ন'বছর আগেই ঘটেছিল।আমি তোমায় ভালোবাসি, তোমার মতামতের সবসময় সম্মান করতাম।তুমি চাওনি তাই আমি সেদিন চুপ ছিলাম।এবং কি তোমার ইচ্ছেতেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে।কিন্তু তুমি এর কিছু ই জানো না।কারণ কিছু সত্য গোপন থাকাই উত্তম, এর ফলে তুমি এবং আমি দুজনই ভালো থাকবো।

ইরাথী তখন কোনো কবিতার দুটো চরণ আবৃত্তি করে আমার বুকে তার মাথাটি রাখলো....

 বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,

 কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!


লিখাঃ তাজরিয়ান মল্লিক 

উৎসর্গঃ অতসী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন