বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

গল্পের নাম শেষ মুহূর্ত

চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে আছে তানিশা। তার মাথার উপরের সিলিং ফ্যানে ঝুলছে তাঁর ওড়না। ওড়নাটিকে গোল করে পাকিয়ে গিট দিয়ে নিল। আজকে সে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চলেছে। সে কারনেই এত তোড়জোড়।

হঠাৎ তার ভীষণ কষ্ট হতে লাগলো। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো তানিশা। আজ এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটি তাঁর কল্পনাতীত ছিল। আজ তার কাছের মানুষদের কারণেই সে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল।

আজ থেকে নয়, সেই ছোটবেলা থেকে নানা রকম বঞ্চনার শিকার হয়েছে সে। এমন বঞ্চনা যেটা বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই। তার মা-বাবার মধ্যকার ঝামেলা সেই ছোট থেকে সে দেখছে। এসব কিছু যে তার উপরে মারাত্মক মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে, তার মা-বাবা সেটা বোঝেনি।

এরপর, সে শিকার হয়েছে নানারকম হ্যারাসমেন্টের।

একদিন তাঁর জীবনে আসে একজন, যাকে সে ভীষণ ভালবাসল। তাকে কাছে পেতে, নিজের করে পেতে সে নিজের সবটুকু দিল। কিন্তু আজ সেই মানুষটাও তাকে ভুল বুঝল। অনেক করে সে বোঝালো, কিন্তু তার আপন মানুষটি তাকে বুঝতে চাইলনা। তার ভালবাসার মানুষটি তার থেকে দূরে সরে গেল।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

কিছুক্ষন পর কান্না মুছে নিয়ে চেয়ার থেকে নামলো। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মোবাইল টা হাতে নিল।

শেষবারের মত একটি বার সে তার প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলবে ভাবল। কল দিতেই ওপাশ থেকে একটা  কণ্ঠে সে শুনতে পেল, নম্বর টি বন্ধ আছে।

সে চিৎকার করে উঠল, চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তার চিৎকার চার দেয়াল ভেদ করে বাইরে যেতে পারলনা। চার দেয়ালের মধ্যেই ঘুরপাক খেতে লাগল।

মানুষটাকে নিজের কাছে রাখতে এমন কোন কিছু নেই যা সে করেনি।

আজ সামান্য কারণে তার থেকে দূরে সরে গেল।

তানিশা উঠে দাঁড়ালো। তাঁর মনে হতে লাগল এই পৃথিবীতে সে অপ্রত্যাশিত।

তাই সে আজ মৃত্যুকেই বরণ করে নিবে। স্বেচ্ছায় বরণ করবে। সে গোল করে পাকানো ওড়না টা নিজের গলাতে পরে নিল। পা দিয়ে চেয়ার টাতে ধাক্কা দিল।

ঠিক সেই মুহূর্তে তানিশার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে যে স্বপ্ন দেখছিল সেটা বুঝতে তার কিছুক্ষন সময় লাগল। সে ইতিমধ্যেই অনেক ভয় পেয়ে গেছে, এই শীতের রাতেও সে তরতর করে ঘামছে। যা সে স্বপ্নে দেখেছে তা নিঃসন্দেহে ভয়ঙ্কর। "কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন আমি আমার অস্তিত্ব কে মুছে ফেলবো না কিছুতেই" সে আনমনে বলতে লাগলো। জানালা দিয়ে সে বাইরে তাকাল। রূপোলী চাঁদ তাঁর জোৎস্ন্যা দিয়ে পৃথিবীটি কি সুন্দর করেই না রাঙিয়ে রেখেছে!! চারপাশ টা কি সুন্দর লাগছে!

যদি শেষ মুহূর্তে তার ঘুম টা না ভাঙতো সে কি এই মনোরম দৃশ্য দেখতে পেত?


লেখিকা- ইসরাত জাহান ইভা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন